১৮ মার্চ ২০১০

মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ তাপ তৈরি হলো পৃথিবীতে

সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতিকায় তারার বিস্ফোরণে (সুপারনোভা) যে তাপ উৎপন্ন হয় তা সূর্যের কেন্দ্রের চেয়ে ছয় হাজার গুণ বেশি। আর তার চেয়েও বেশি তাপ কি না তৈরি হলো পৃথিবীর এক গবেষণাগারে!
(রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন কলাইডর)
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে বিগ ব্যাংয়ের সময়কার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ জন্য দরকার ছিল বিগ ব্যাংয়ের সময়কার তাপ তৈরি, যা দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তাৎক্ষণিক অবস্থা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়কের্র ব্রুকহেভেন ল্যাবরেটরিতে চার ট্রিলিয়ন (চারের পর ১২টি শূন্য) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের চেনা মহাবিশ্বে আর কোথাও এত তাপ এর আগে তৈরি হয়নি। এ তাপ মুহূর্তের মধ্যে বস্তুর সবচেয়ে ছোট কণা পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা প্রোটন ও নিউট্রনকে গলিয়ে ফেলতে যথেষ্ট। টানেলের ভেতর পার্টিকেল এক্সিলারেটর ও রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন কলাইডর (আরএইচআইসি) যন্ত্র দিয়ে একঝাঁক স্বর্ণের পরমাণুর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে এ তাপ তৈরি করা হয়েছে।
চার ট্রিলিয়ন তথা চার লাখ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস কেমন গরম? তবে ঝটপট জেনে নিন, এই মুহূর্তে মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা পরম শূন্যের (মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে ০.৭ ডিগ্রি বেশি। মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৩৬.৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিক বায়ুচাপে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানি ফুটতে থাকে। লোহা গলে যায় এক হাজার ৮০০ ডিগ্রিতে। একটি নক্ষত্রের বিস্ফোরণে তৈরি হয় ২০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পরমাণুর প্রোটন গলতে লাগবে দুই লাখ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ। অর্থাৎ চার ট্রিলিয়ন ডিগ্রিটা আমাদের কল্পনারও বাইরে।
পরমাণু গঠিত হয় কোয়ার্ক ও গ্লুওন কণা দিয়ে। তবে বিগ ব্যাংয়ের শুরুতে সব কণা ছিল স্যুপের মতো জমাটবদ্ধ ও তরল। ধারণা করা হয়, বিগ ব্যাংয়ের কারণেই আলাদা হয়ে যায় সব কণা। এরপরই তৈরি হয় পরমাণু ও অণু। গবেষকদের বিশ্বাস তারা সৃষ্টির শুরুতে কোয়ার্ক-গ্লুওনের ওই স্যুপ থেকে হাড্রন কণা (বস্তুর মৌলিক কণা) তৈরির ঠিক আগের মূহূর্তটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে পারবেন। হাড্রন হচ্ছে আমাদের মহাবিশ্বের প্রায় সব বস্তুর গাঠনিক উপাদান। মহাবিস্ফোরণের ঠিক পরমূহূর্তে এমন কিছু ঘটেছিল, যার কারণে অ্যান্টিম্যাটারের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল ম্যাটার তথা বস্তুকণার সংখ্যা। তা না হলে ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটারের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মহাবিশ্বে শুধু শক্তিই থাকত, বস্তু বলে কিছু থাকত না!
এই বছরই সুইজারল্যান্ডে লার্জ হাড্রন কলাইডরের (এলএইচসি) সাহায্যে বিজ্ঞানীরা সিসার পরমাণুর সংঘর্ষ ঘটিয়ে আরো উচ্চ তাপমাত্রা তৈরির আশা করছেন। পদার্থবিদ দিমিত্রি খারজিভ জানান, তাঁরা এরই মধ্যে এ ধরনের গবেষণার বাণিজ্যিক প্রয়োগের পেটেন্ট পেয়েছেন। এর লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র আবিষ্কার, যা শুধু ইলেকট্রিক চার্জের প্রবাহেই চলবে না, চার্জের ঘূর্ণনের ফলে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হবে তাও কাজে লাগাবে। অর্থাৎ এই যন্ত্র তৈরি হলে শক্তি বা জ্বালানি তৈরির নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন